ঠেকানো যাচ্ছে না ইয়াবা চোরাচালান
দেশে ইয়াবা সেবীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল সবখানেই মিলছে ইয়াবা। সহজলভ্যতার কারণে দিন দিন ইয়াবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। সীমান্ত পথে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ইয়াবা প্রবেশ করছে। ধরাও পড়ছে ছোট-বড় চালান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে যত ইয়াবা আসছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার খুবই অল্পপরিমাণ আটক করতে সমর্থ হচ্ছে।
টেকনাফে দায়িত্বপ্রাপ্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অদিফতরের এক কর্মকর্তা জানান, লোকবলসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মোট চালানের মাত্র এক বা দুই শতাংশ ধরা পড়ছে। বলা চলে ইয়াবার পুরো চালানই নির্বিঘ্নে দেশে প্রবেশ করছে।
জানা গেছে, দেশে যত মাদক ব্যবহার হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ইয়াবার ব্যবহার। এর আগ্রাসন রাজধানী থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। আগে যারা নিয়মিত ফেনডিল সেবন করতো তাদের অনেকেই এখন ইয়াবায় আসক্ত। ইয়াবার মূল উত্স হল পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার। প্রতিদিন কক্সবাজার-টেকনাফ সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ঠেকানো যাচ্ছে না ইয়াবার চোরাচালান।
এমন বাস্তবতায় প্রায় সাড়ে চার বছর পর আজ মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ ও মিয়ামারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক। এতে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক উত্পাদন ও মাদক পাচার সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় হবে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশ ইয়াবা চোরাকারবারীদের তালিকা ও সীমান্তে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৩৯ ইয়াবা কারখানার তালিকা তুলে দেবে।
এ ব্যাপারে অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ৩৯টি ইয়াবা কারখানা। মিয়ানমারের পূর্ব সীমান্তে এগুলোর অবস্থান। সেখান থেকে পরিবহনে করে মিয়ানমারের পশ্চিম সীমান্তে (বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত) আনা হয় ইয়াবা। পরে বিভিন্নভাবে এগুলো বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
ইয়াবাসহ সবধরনের মাদক প্রবেশ বন্ধ ও চোরাচালান ঠেকাতে ১৯৯৪ সালে ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, দু’দেশ মাদক সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়, মাদক সংক্রান্ত আইন-বিধি সম্পর্কে পরস্পরকে অবহিত করা, মাদক পাচার রোধ, মাদক থেকে অর্জিত অর্থের পাচার প্রতিরোধ, অর্থ পাচার শনাক্ত, মাদক থেকে অর্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারস্পরিক সহযোগিতা, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত পারস্পরিক যোগাযোগ ও মাদক ব্যবসায়ীদের প্রোফাইল বিনিময় করা হবে।
এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। ইয়াবার চোরাচালান ঠেকাতে ও চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে বিভিন্ন সময় তাগাদা দিতে থাকে। কিন্তু দেশটি তেমন আগ্রহ দেখায়নি। এরপর প্রায় ১৭ বছর পর ২০১১ সালে মিয়ানমারের ইয়াংগুনে দুই দেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে একটি বৈঠকে মিলিত হয়। সেখানে বলা হয়, এরপর থেকে দু’ দেশ নিয়মিত মাদক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার রোধে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় ঢাকায় বৈঠকটি অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ হতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও মিয়ানমারের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।
দুই দিনব্যাপী এই বৈঠকে আজ বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) বজলুর রহমান। অপরদিকে মিয়ানমারের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কেওয়াউন। তিন সদস্যের টিম গতকাল ঢাকায় পৌঁছেছে।
বৈঠক সম্পর্কে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বজলুর রহমান জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমার হতে ইয়াবা পাচার, সাইকোট্রোপিক সাবস্ট্যান্স অনুপ্রবেশ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমার অংশে ইয়াবা তৈরির কারখানা ধ্বংসে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে তালিকা হস্তান্তর করা হবে। মাদক সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে।
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের দ্বিতীয় তলার মেঘনা হলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ১০ টায় বৈঠক শুরু হবে। এটি মহাপরিচালক পর্যায়ের দ্বিতীয় বৈঠক। আগের বৈঠকটি হয়েছিল ইয়াংগুনে, ২০১১ সালের ১৫-১৬ নভেম্বর।
ঠেকানো যাচ্ছে না ইয়াবা চোরাচালান
Reviewed by sohel
on
May 04, 2015
Rating: