পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ
এই দিনটির জন্যই সম্ভবত গোটা বাংলাদেশ অপেক্ষায় ছিল। ৪ বছর আগে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরেছিল টাইগাররা। সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়ে চলতি এশিয়া কাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে মাশরাফিবাহিনী। অঘোষিত ফাইনালে গতকাল পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল। আবারও শিরোপা লড়াইয়ে নামবে টিম টাইগার। এবার প্রতিপক্ষ ভারত।
পাকিস্তানকে ইতিমধ্যে কয়েকবারই হারিয়েছে টাইগাররা। কিন্তু এশিয়া কাপে তাদের বিরুদ্ধে ফাইনালসহ ২টি ম্যাচে হারের প্রতিশোধটা ঠিক যেন নেয়া হয়নি। কালকের ম্যাচে তাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় প্রত্যাশা ছিল টাইগার ভক্তদের। খোদ যেন সেই অপেক্ষায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। আর তাই গতকাল মিরপুর স্টেডিয়ামে বসে প্রায় পুরো ম্যাচই তিনি দেখেছেন। উৎসাহ দিয়েছেন মাশরাফি-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহদের। এই জয়ে দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে স্বাধীনতার মাসে পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অভিনন্দন জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান।
এদিকে গতকাল ছিল বাংলাদেশের পতাকা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। পাকিস্তানকে ‘বধ’ করে এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। আরেকটি মার্চে, একই ভেন্যুতে, সেই পাকিস্তানকে নখ কামড়ানো উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে হারিয়ে এবার শেষ হাসি হাসলো বাংলাদেশ। স্নায়ুর পরীক্ষা নেয়া ম্যাচে পাকিস্তান আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৯ রান করেছিল। শেষ ওভারের প্রথম বলে মাহমুদউল্লার চারে জিতে যায় বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২২ মার্চ এশিয়া কাপের ফাইনালে এই পাকিস্তানের বিপক্ষেই স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় পুড়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে সাকিব-মুশফিকদের কান্না কাঁদিয়েছিল গোটা দেশকেই। ২০১৪ সালের ৪ মার্চ, এশিয়া কাপে আবারও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় ফসকে গিয়েছিল হাতের মুঠো থেকে। এবার আরেকটি মার্চেই বাংলাদেশের ভাগ্যবদল। জয়রসূচক চার মেরেই ড্রেসিং রুমের দিকে ছুটলেন মাহমুদউল্লাহ, ঝাঁপিয়ে পড়লেন ঘাসে। তার ওপর ঝাঁপালেন দলের বাকি সবাই। চার বছর আগে যে মাঠের সবুজ ঘাসে মিশে গিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কান্না, এবার সেই ঘাসেই বিজয় উৎসব।
ইনিংসের শুরুতে দুঃসময়ের সঙ্গে লড়াই করে বাংলাদেশকে টেনেছেন সৌম্য সরকার। মাঝে স্বাগতিকরা কিছুটা পথ হারালেও অসাধারণ দক্ষতায় শেষটা করেছেন মাহমুদউল্লাহ ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হুমকি হতে পারতেন মোহাম্মদ আমির। সেই আমিরকেই প্রথম ওভারে দুর্দান্ত এক ফ্লিক শটে ছক্কা মেরে তামিম ইকবাল শুরু করেন বাংলাদেশের রান তাড়া। ফেরার ইনিংসে তামিম (৭) টেকেননি বেশিক্ষণ। তবে টিকে যান সৌম্য। সাব্বির রহমানকে (১৪) নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৩৩ রানের জুটিতে কাটিয়ে দেন শুরুর ধাক্কা। বেশ কবারই অল্পের জন্য সৌম্যর ব্যাটের কানা নেয়নি বল। বল হাওয়ায় উড়লেও পড়েছে ফিল্ডারের আশেপাশে। ভড়কে না গিয়ে ব্যাট চালিয়ে যান সৌম্য। টাইমিংয়ে গড়বড় অনেক শটের পাশাপাশি খেলেছেন দারুণ সব শটও।
এই সৌম্যকে ফেরাতে প্রয়োজন ছিল ‘স্পেশাল’ একটি বল। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে পাকিস্তানকে তেমনই একটি ডেলিভারি উপহার দেন আমির। অসাধারণ ইয়র্কারে বোল্ড সৌম্য (৪৮ বলে ৪৮)। মুশফিক-সাকিব এগোচ্ছিলেন সিঙ্গেলে ভর করে। হঠাৎই শোয়েব মালিককে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ মুশফিক (১২)। শ্রীলঙ্কান আম্পায়ার রুচিরা পালিয়াগুরুগের সিদ্ধান্তটি অবশ্য ছিল বাজে, বল পিচ করেছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে, যেত স্টাম্পের ওপর দিয়ে। বাংলাদেশ তখন বেশ চাপে, শেষ ৪ ওভারে প্রয়োজন ৩৫ রান। অসাধারণ এক শটে চাপটা কমান মাহমুদউল্লাহ। শর্ট অব লেংথ বলকে ছক্কা মারেন লং অফ দিয়ে, টুর্নামেন্টেরই অন্যতম সেরা শটে। তবে বাজে শটে মুশফিককেও ছাড়িয়ে যান সাকিব। প্রতিপক্ষের সেরা বোলার আমিরকে অযথাই স্কুপ করতে গিয়ে হন বোল্ড (৮)। বাংলাদেশ তখন শঙ্কায়। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ যে হয়ে উঠেছেন অসাধারণ এক ‘ফিনিশার!’ আবারও খেললেন অসাধারণ এক ইনিংস। আর প্রয়োজনের সময় ৭ বলে ১২ রানের মহামূল্য এক ইনিংস খেললেন মাশরাফি। সাকিব আউট হওয়ার পরের দুই বলে অধিনায়কের দুটি বাউন্ডারি ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচের মোড়।
নাটকীয়তার বাকি ছিল অবশ্য তখনও। ১৯তম ওভারে সামির বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন মাশরাফি। ফিল্ডার ক্যাচ ধরেনও, কিন্তু আম্পায়ার ডাকেন নো! ওই ওভারেই আরেকটি নো বলে চার মারেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ ওভারের প্রথম বলে আরেকটি চারে তিনিই শেষ করেন ম্যাচ (১৫ বলে ২২*)।
এর আগে বাংলাদেশকে জয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলাররা। উইকেট ছিল না ঘাস, এখনও পর্যন্ত এবারের টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ভালো ব্যাটিং উইকেট। সেখানেই ইনিংসের প্রায় পুরোটা জুড়ে দারুণ বোলিং করলেন বাংলাদেশের বোলাররা। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বোলিং পরিবর্তন ও মাঠ সাজানো ছিল প্রায় নিখুঁত। দলের ফিল্ডিং ছিল অসাধারণ, মাঠে সবাই ছিলেন প্রাণশক্তিতে ভরপুর। কিন্তু সরফরাজ আহমেদ (অপরাজিত ৫৮) ও অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক (৪১) খাদের কিনারা থেকে টেনে পাকিস্তানকে এনে দেন লড়ার মত রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১২৯/৭ (মনজুর ১, শারজিল ১০, হাফিজ ২, সরফরাজ ৫৮, আমল ৪, মালিক ৪১, আফ্রিদি ০, আনোয়ার ১৩; আল আমিন ৩/২৫, আরাফাত ২/৩৫, তাসকিন ১/১৪, মাশরাফি ১/২৯)
বাংলাদেশ: ১৯.১ ওভারে ১৩১/৫ (তামিম ৭, সৌম্য ৪৮, সাব্বির ১৪, মুশফিক ১২, সাকিব ৮, মাহমুদউল্লাহ ২২*, মাশরাফি ১২*; আমির ২/২৬, মালিক ১/৩, আফ্রিদি ১/২০, ইরফান ১/২৩)
ম্যাচ সেরা: সৌম্য সরকার (বাংলাদেশ)
পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ
Reviewed by sohel
on
March 02, 2016
Rating: