গোবিন্দ ভিটা
গোবিন্দ ভিটা একটি খননকৃত প্রত্নস্থল যা বগুড়া জেলাস্থ মহাস্থানগড়-পুন্ড্রনগরীর উত্তর পরিখার উত্তর তীরে অবস্থিত। গোবিন্দ ভিটা শব্দের অর্থ গোবিন্দ (হিন্দু দেবতা) তথা বিষ্ণুর আবাস। কিন্তু বৈষ্ণব ধর্মের কোনো নিদর্শন এ স্থানে পাওয়া যায়নি। তবুও প্রত্নস্থলটি স্থানীয়ভাবে গোবিন্দ ভিটা নামে পরিচিত। এ প্রত্নস্থলের পূর্ব ও উত্তর পার্শ্ব দিয়ে করতোয়া নদী প্রবাহিত। গোবিন্দ ভিটা প্রত্নস্থলটি ১৯২৮-২৯ সালে কে.এন দীক্ষিত খনন করেছিলেন। ১৯৬০ সালে ড.নাজিমউদ্দীন আহমদ এখানে একটি গভীর খাদ খনন করেন। দীক্ষিতের খননে পূর্ব ও পশ্চিমে পাশাপাশি অবস্থিত দুসেট মন্দির এবং পরপর চারটি যুগের নিদর্শনসমূহ পাওয়া গিয়েছে।
(১) পশ্চিম পাশে রয়েছে পরবর্তী গুপ্তযুগে (ছয়-সাত শতক) নির্মিত বারান্দাযুক্ত একটি মন্দির যার ভিত্তিভূমি অত্যন্ত গভীর এবং অফসেট যুক্ত।
(২) পশ্চিম পাশেই প্রাথমিক পাল যুগে (৮-৯ শতক) প্রতিষ্ঠিত একটি বারান্দাযুক্ত মন্দির রয়েছে যার ভিত্তি স্তরে স্ত্তরে উঁচু করে নির্মিত হয়েছিল।
(৩) পশ্চিম পাশের এ উঁচু ভিত্তিটি পরবর্তী পাল ও সেন যুগে এবং এমন কি মুসলমানদের সময়েও ব্যবহূত হয়েছিল। মন্দিরের পাশে একটি চন্ডীদেবীর প্রস্তর প্রতিমা (১১ শতক) এবং একটি নৃত্যরত গণেশের প্রস্তর প্রতিমা (১১ শতক) পাওয়া গিয়েছে।
(৪) পশ্চিম পাশের মন্দিরের উপরে মুসলিম তথা সুলতানি যুগে (১৫-১৬ শতক) নির্মিত একটি ইটের প্লাটফর্ম আবিষ্কৃত হয়েছে।
গোবিন্দ ভিটার পূর্ব পাশের মন্দির অংশে সুস্পষ্ট চারটি যুগের সাংস্কৃতিক নিদর্শনসমূহ আবিষ্কৃত হয়েছে। যথা:
(১) পরবর্তী গুপ্ত যুগে নির্মিত বর্গাকৃতির মন্দির যার মধ্যে প্রদক্ষিণপথ বেষ্টিত একটি আয়তাকার ডায়াস রয়েছে।
(২) প্রাথমিক পাল যুগে নির্মিত একটি কমপ্লেক্স এবং বহুপার্শ্ব বিশিষ্ট প্রস্তর বেদি।
(৩) পরবর্তী পাল যুগে নির্মিত কিছু ক্ষয়িষ্ণু দেওয়াল এবং একটি সম্ভাব্য অগ্নিশিলা। মুসলিম তথা সুলতানি যুগে নির্মিত একটি ভগ্ন মেঝের মধ্যে ১৮টি মুদ্রা ভর্তি একটি মাটির পাত্র। মুদ্রাগুলি বাংলার সুলতানগণ জারি করেছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক পাল যুগেই দুটি মন্দির ঘিরে একটি সাধারণ বেষ্টনী প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া মন্দির সংলগ্ন নদীর তীরে এ যুগে নির্মিত পাথরের রক্ষা বাঁধ বা রক্ষা প্রাচীর এবং একটি পাথরের বাঁধানো ঘাট ছিল যা ১৯২২ সালের প্লাবনে ভেসে গিয়েছে।
গোবিন্দ ভিটায় ১৯৬০ সালের গভীর খাদ খননের ফলে আবিষ্কৃত হয় মৌর্যযুগের ছাপাংকিত ও ঢালাই করা রৌপ্য মুদ্রা এবং উত্তরাঞ্চলীয় কালো চক্চকে মৃৎপাত্র, অর্ধ-ডজন শূঙ্গযুগের (খ্রি.পূ. ২য়-১ম অব্দ) পোড়ামাটির ফলক, একটি খোদাইকৃত নীল পাথরের চাকতি আকৃতির প্রসাধনী ট্রে (খ্রি. ১ম-২য় শতক), একটি কাদা মাটির তৈরী সীলমোহর ও পোড়ামাটির মস্তক (৪র্থ শতাব্দী), তিনটি বৃহৎ মাটির পাত্র বা ভাট (খ্রিস্টীয় ৬-৭ শতক) যাতে শঙ্খখোসা ও চুন এবং নরকংকাল ছিল। এখানে প্রাপ্ত অন্যান্য নিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিভিন্ন আকৃতির ও ধরনের পোড়ামাটির দ্রব্য, স্বল্পমূল্যের পাথরের তৈরী গুটিকা ও বোতাম, কানবালা ও কুন্তল, নাকফুল ইত্যাদি। এ ছাড়া, পোড়ামাটির মূর্তি ও খেলনা এবং তামা ও ব্রোঞ্জের তৈরী বলয় এবং সুরমা দন্ডও পাওয়া গিয়েছে।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড হতে বাস,কার,অটো-টেম্পু,রিক্সা ও ভ্যানযোগে পৌঁছানো যাবে। উল্লেখ্য যে, বৃহত্তর এই পিকনিক স্পটে থাকা ও খাওয়ার সু-ব্যাবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন এখানে শত শত মানুষ পর্যটন করতে আসে।
।। শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন ।।